নিজের প্রতি ভালোবাসা আমার প্রেরণা: ওবায়দুল করিম খান
আমার প্রতি অন্যের ভালোবাসা আমাকে প্রেরণা জাগায়নি, এমনকি অন্যের প্রতি আমার ভালোবাসাও নয়। আমাকে প্রেরণা জাগিয়েছে শুধুমাত্র আমার নিজের প্রতি নিজের ভালোবাসা।
যা পড়েছি, যা জেনেছি তা আমাকে উদ্ভুদ্ধ করতে পারেনি।কত কিছু তো শিখেছি, কত কিছু তো জেনেছি। সেই শৈশব থেকে শুনে আসছি, জীবনে সফল হতে হলে পরিশ্রম করো, নিজের লক্ষ্য স্থির করো, মনোযোগী হও ইত্যাদি। সমস্যা হলো এই সব উপদেশ কোন কাজে আসে না।
সেই পাঠশালায় পড়া কাল থেকে জেনে আসছি জানি, স্বাস্থ্য সকল সুখের মুল। শরীর সুস্থ না থাকলে আর সব কিছু মূল্যহীন। কিন্তু জানার পরও ব্যায়াম না করে অলস ভাবে হিন্দি ছবি দেখি, স্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে মুড়ি, চানাচুর আর চা নিয়ে অলসভাবে বসে টিভি দেখি বা স্মার্টফোন টেপাটিপি করি।
আমি জানি, বন্ধুদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হলে, বন্ধুত্বের সম্মান দিতে হয়। কিন্তু বাস্তবে তাদের আড়ালে তাদের সমালোচনা করি। আমি জানি, বৌ এর সাথে কিভাবে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখতে হয়, কিভাবে ছোট খাটো ব্যাবহারে খুশী রাখতে হয়। একটা ফুল দিলেই তো ঝামেলা মিতে যায়। তা জেনেও কিছু জেনেও, তার সাথে অহেতুক বিষয় নিয়ে তর্কে জড়াই, সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি করি।
আমি জানি, আমার চাকরি শুধু টাকা উপার্জনের জন্য নয়। আমার কাজে আমার সৃজনশীলতা বিকশিত করতে হবে, সবচেয়ে বড় কথা কাজের মধ্যে সন্তুষ্টি ও আনন্দ থাকতে হবে। কিন্তু জানার পরও একটা ক্লান্তিকর কাজে নিয়োজিত থাকলাম যাতে নিজেকে তুলে ধরতে পারলাম না।
সেই বাল্যকাল থেকে আমার বেখাপ্পা দেহটির জন্য সতীর্থদের ব্যাঙ্গ বিদ্রুপের শিকার হতাম। তখন থেকেই মনে হতো, আমি না হয়ে অন্য একটা আমি হলে ভালো হতো। সুদর্শন, স্মার্ট সম্পূর্ণ অন্য আমি। সেই আকাঙ্খা পরবর্তীতেও রয়ে গিয়েছিলো। আমার নতুন এক সংস্করণ সৃষ্টি করতে ব্যায়াম করা শুরু করলাম, সম্পর্কগুলো ভালো করার চেষ্টা শুরু করলাম। কিন্তু এইসব প্রচেষ্টা স্থায়ী হলো না। আমাকে অন্য কিছু করা একটা ব্যার্থ ও দুঃখজনক প্রেরণা। আমি ক্রমশ: ব্যাথিত হলাম, নিজের প্রতি ক্ষুব্ধ হলাম। যা করছি তা হতো ঠিক কিন্তু যে কারণে করছি তা ঠিক নয়।
ব্যার্থতার পর যে প্রেরণা পেলাম সেটাই যথার্থ। আমার জীবন মূলত আমার। আমি নিজে নিজের সবচেয়ে আপন। আমি আমার জন্য ভালোভাবে বাঁচবো। আমি সুস্থ্যভাবে বাঁচবো , এজন্য আমি বসে সিনেমা দেখবো না, আমি দৌড়াতে যাবো। আমি আমার সন্তুষ্টির জন্য সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখবো। আমি আমাকে ভালো রাখতে পারলে আমার সন্তানদের ভালো রাখতে পারবো।
নিজের প্রতি আমার ভালোবাসা আমাকে সুখী ও সফল করেছে।